১৩ অক্টোবর ২০২৫ , ২৭ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

পিআর পদ্ধতি চেয়ে আন্দোলনকারীরা নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে- মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপলোড সময় : ১২-১০-২০২৫
পিআর পদ্ধতি চেয়ে আন্দোলনকারীরা নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে- মির্জা ফখরুল
পিআর পদ্ধতি চেয়ে যারা আন্দোলন করছেন, তাদের লক্ষ্যই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘পিআর পদ্ধতির নির্বাচন জনগণ গ্রহণ করবে না।’

রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির উদ্যোগে ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনির দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।



ফখরুল বলেন, ‘কয়েকটি রাজনৈতিক দল পিআর পদ্ধতি নিয়ে কথা বলছে এবং এটার জন্য তারা আন্দোলনও করছে। এর একটাই লক্ষ্য তা হচ্ছে, নির্বাচনকে বিলম্বিত করা। জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার যে প্রক্রিয়া, সেই প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করা।’

তিনি বলেন, ‘পিআর পদ্ধতি এই দেশের মানুষ গ্রহণ করবে না। আমাদের দলের পক্ষ থেকে তো আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, এখনো বলছি, জনগণই এই পদ্ধতি গ্রহণ করবে না। চাপিয়ে দেওয়া কোনো কিছু এদেশের মানুষ গ্রহণ করবে না।’

বিএনপি মহাসচিব আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘অন্তবর্তী সরকারের কমিটমেন্ট হলো, ২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই নির্বাচন হবে। আমরা সেটাই দেখতে চাই। জনগণ নির্বাচন দেখতে চায় এবং সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চায় এবং গণতন্ত্রের মধ্য দিয়েই জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষাগুলো পূরণ করতে চায়।’




তিনি বলেন, ‘আমরা জানি যে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে যেকোনো দল জয়ী হতে পারে জনগণের ইচ্ছার উপর দিয়ে। কিন্তু সেই দলকেই জনগণ বেছে নেবে, যে দল পরীক্ষিত, অতীতে যারা পরীক্ষা দিয়েছে অর্থাৎ সরকারে ছিল, কাজ করেছে। যেই দল মানুষকে আশার আলো দেখিয়েছে, যেই দল অন্ধকার থেকে আলোতে টেনে নিয়ে এসেছে।’


ফখরুল বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এ দেশে প্রথম সংবিধানে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম সংযোজন করেছিলেন, তিনিই প্রথম এই দেশের সংবিধানে আল্লাহর উপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস কথাটি রেখেছিলেন। এখন কিছু দল সেগুলোকে বিকৃত করে বিভিন্নভাবে বিএনপিকে চিত্রায়িত করার চেষ্টা করছে।’

তিনি বলেন, ‘যাদের বয়স কম তারা জানে না, যাদের বয়স একটু বেশি তারা দেখেছেন, ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে কী অবস্থার প্রেক্ষিতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে এই দেশের মানুষ ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বেরিয়ে এসে সম্পূর্ণভাবে নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য নতুন করে স্বনির্ভর বাংলাদেশ তৈরির কাজে ঝাপিয়ে পড়েছিল।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ঠিক একইভাবে আজকে আবার আমরা সবাই এক হয়েছি আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে। আমরা অবশ্যই বাংলাদেশকে আবার একটা স্বনির্ভর, আত্মমর্যাদা সম্পন্ন দেশ হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড় করাবো, এমন বাংলাদেশই নির্মাণ করতে চাই।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনেক ষড়যন্ত্র আছে, চক্রান্ত আছে। সমস্ত ষড়যন্ত্র চক্রান্তকে পরাজিত করার শক্তি বাংলাদেশের মানুষের আছে।’

সামনে কঠিন পরীক্ষা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সামনে কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে। প্রতিদিন ইউটিউব, টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে বিভিন্ন রকম মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমার বিশ্বাস, আপনারা সেখান থেকে সঠিক তথ্যটি বেছে নিতে পারবেন। এই দেশের মানুষ কখনো ভুল করে না, সবসময় সঠিক পথে এগিয়ে যায়। শান্তিপূর্ণভাবে আমরা সেই প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে চাই।’ 

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ তার আস্থা প্রকাশ করবে এবং তাদের একটা পার্লামেন্ট ও তাদের সরকার বেছে নেবে। আপনাদেরকে আবার অনুরোধ করব, একটা সুযোগ আমরা পেয়েছি, বাংলাদেশকে নতুন করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার সেই সুযোগ যেন না হারাই।’

আরও পড়ুন: উপদেষ্টাদের সততার ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে: মির্জা ফখরুল
একাত্তর মুছে ফেলা যাবে না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কিছু সংখ্যক মানুষ চেষ্টা করে আমাদের ১৯৭১ সালের ইতিহাসকে ভুলিয়ে দিতে। এটাও সবসময় মাথায় রাখতে হবে, একাত্তরে যুদ্ধ হয়েছিল বলেই আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম, স্বাধীন হয়েছিলাম বলেই আজকে আমরা নতুন রাষ্ট্রের নতুন চিন্তা করতে পারছি, স্বাধীন হয়েছিলাম বলেই আজকে দেশের মানুষের অবস্থার পরিবর্তন করার যে সংগ্রাম, তাতে অংশ নিতে পারছি।’

তিনি বলেন, ‘তখন আমরা যুবক ছিলাম, লড়াই করেছি, যুদ্ধ করেছি। আমাদের মধ্যে এখানে অনেকে আছেন যারা সেই যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, পরবর্তীকালে গণতান্ত্রিক আন্দোলনগুলোতে অংশ নিয়েছেন, এই চব্বিশের আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। একটাই লক্ষ্য, আমরা বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই একটি গণতান্ত্রিক সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সেই কথাটি মাথায় রেখে সকলে যেন সামনের দিকে এগিয়ে যাই।’

ফখরুল বলেন, ‘আপনারা ইতোমধ্যে দেখেছেন, তারেক রহমান একটা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বিবিসিতে। সেখানে তিনি নানা প্রশ্নগুলো তুলে ধরেছেন এবং কিভাবে তিনি দেশের সমস্যার সমাধান করতে চান, সেই সমস্যাগুলো তুলে ধরেছেন। ফিন্যাশনাল টাইমসেও তিনি একইভাবে কথাগুলো বলেছেন।’

বেকার সমস্যাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে বিএনপি ইতোমধ্যে কমিটি গঠন করে কাজ শুরু করেছে এবং ‘অনেক কাজ সম্পন্ন’ করে রাখা হয়েছে বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব।

ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাগপার খন্দকার লুফুর রহমান, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, সাম্যবাদী সৈয়দ নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপের এমএন শাওন সাদিকী বক্তব্য দেন। 


কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ