হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া

আপলোড সময় : ০৯-১০-২০২৫ , আপডেট সময় : ০৯-১০-২০২৫
গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনায় প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছে হামাস ও ইসরায়েল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবে অগ্রগতির লক্ষণ দেখা দেওয়ায় বিভিন্ন মহল দ্রুতই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। প্রায় সবাই একবাক্যে মেনে নিয়েছেন যে, দু বছর ধরে চলা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান ও টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠায় কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে।

মিসর, কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় শার্ম আল শেখে অনুষ্ঠিত পরোক্ষ আলোচনার ফলে এই চুক্তিতে অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।


যুক্তরাষ্ট্র

ট্রাম্প বলেছেন, উভয় পক্ষ গাজার যুদ্ধ শেষ করতে তার পরিকল্পনার প্রথম ধাপে স্বাক্ষর করেছে—যার মধ্যে বন্দিদের মুক্তি ও ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত।

ট্রাম্প একে ‘বছরের পর বছর যুদ্ধের পর শান্তির সূচনা’ আখ্যা দিয়ে বলেন, বিশ্ব এখন ইতিহাসের এক বিশেষ মুহূর্ত প্রত্যক্ষ করছে। এটি বিশ্বের জন্য এক মহান দিন।

যুক্তরাজ্য

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বিবিসিকে বলেন, দুই বছরের অসহনীয় দুর্ভোগের পর এটি সারা বিশ্বের জন্য গভীর স্বস্তির মুহূর্ত, বিশেষ করে জিম্মিদের পরিবার ও গাজার বেসামরিক জনগণের জন্য।

তিনি মিসর, কাতার, তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের ‘অবিরাম কূটনৈতিক প্রচেষ্টার’ প্রশংসা করে বলেন, চুক্তিটি অবিলম্বে ও পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে, পাশাপাশি গাজায় জীবনরক্ষাকারী মানবিক সহায়তার ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানান।

কানাডা

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি সামাজিক মাধ্যমে বলেন, দীর্ঘ দিনের ভোগান্তির পর শান্তি এখন বাস্তবসম্মত মনে হচ্ছে। কাতার, মিসর ও তুরস্কের ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি আহ্বান করেন, সব পক্ষ যেন দ্রুত চুক্তির শর্তগুলো কার্যকর করে এবং ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তির পথে এগোয়।

সাধারণ ফিলিস্তিনি

চুক্তি ঘোষণার পর গাজা সিটি, খান ইউনুস ও আশপাশের এলাকায় ফিলিস্তিনিদের আনন্দোৎসবের দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

মানুষ পতাকা হাতে সড়কে নেমে স্লোগান দেন। অনেকে একে ‘দুই বছরের যুদ্ধের পর বহুল প্রতীক্ষিত স্বস্তির মুহূর্ত’ বলে অভিহিত করেন।

দক্ষিণ গাজার উপকূলীয় এলাকা আল-মাওয়াসিতে রাত নামার পর ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে পরিবেশ, কেউ কেউ আনন্দে আকাশে গুলি ছোড়েনও।

হামাস

হামাস এক বিবৃতিতে জানায়, গাজায় যুদ্ধের অবসান নিশ্চিত করতে এক চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে দখলদার বাহিনী (ইসরায়েলি সেনা) প্রত্যাহার, মানবিক সহায়তা প্রবেশ ও বন্দি বিনিময়।

কাতার, মিসর, তুরস্ক ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে তারা আরও বলে, আমরা চাই গ্যারান্টর রাষ্ট্রগুলো ইসরায়েলকে চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়নে বাধ্য করুক।

ফিলিস্তিনিদের ত্যাগ বৃথা যাবে না উল্লেখ করে হামাস বলে, স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণ অর্জন না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে।

ইসরায়েল

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই চুক্তিকে ‘কূটনৈতিক সাফল্য ও জাতীয় নৈতিক বিজয়’ হিসেবে উল্লেখ করে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, দৃঢ় অবস্থান, সামরিক পদক্ষেপ ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবিচল সহযোগিতার ফলেই আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকে পৌঁছেছি।

কাতার

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি জানান, চুক্তির প্রথম ধাপ বাস্তবায়নের শর্তাবলি নিয়ে মধ্যস্থতাকারীরা একমত হয়েছেন।

তিনি বলেন, এতে যুদ্ধের অবসান, বন্দি বিনিময় ও গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের ব্যবস্থা থাকবে।

তুরস্ক

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতির পথে আনতে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রদর্শনের জন্য আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই। চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।

তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলে, এই চুক্তি গত দুই বছর ধরে চলা গণহত্যার অবসান ঘটাবে বলে আমরা আশা করি।

অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এবিসি নিউজকে বলেন, দুই বছরেরও বেশি সংঘাত ও বিপুল প্রাণহানির পর এটি শান্তির পথে এক অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়া সব সময় যুদ্ধবিরতি, জিম্মিমুক্তি এবং গাজায় মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করার আন্তর্জাতিক আহ্বানের অংশ ছিল।

আলবানিজ ট্রাম্পসহ মিসর, কাতার ও তুরস্কের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, গাজায় পুনর্গঠন ও দীর্ঘমেয়াদি শান্তির পথে এখনও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে, তবে অস্ট্রেলিয়া অংশীদারদের সঙ্গে থেকে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক স্থায়ী সমাধানে অবদান রাখবে।

ভারত

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক বিবৃতিতে বলেন, আমরা এই চুক্তিকে স্বাগত জানাই এবং আশা করি জিম্মিমুক্তি ও মানবিক সহায়তা গাজার জনগণকে স্বস্তি দেবে এবং টেকসই শান্তির পথ উন্মুক্ত করবে।

পাকিস্তান

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এ চুক্তিকে ‘গাজায় গণহত্যার অবসান ঘটানোর ঐতিহাসিক সুযোগ’ উল্লেখ করে বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পাশাপাশি কাতার, মিসর ও তুরস্কের দৃঢ় ও প্রজ্ঞাবান নেতৃত্বও প্রশংসার দাবিদার। তবে সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধা প্রাপ্য ফিলিস্তিনি জনগণের, যারা নজিরবিহীন যন্ত্রণা সহ্য করেছে, যা আর কখনও ঘটতে দেওয়া উচিত নয়।

নিউজিল্যান্ড

নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স বলেন, এই চুক্তি স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে একটি অপরিহার্য প্রথম পদক্ষেপ।

তিনি বলেন, গত দুই বছরে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিরা অসীম কষ্ট ভোগ করেছে। আজকের দিনটি সেই যন্ত্রণার অবসানের শুরু।

পিটার্স আহ্বান জানান, হামাস যেন সব জিম্মিকে মুক্তি দেয় এবং ইসরায়েল যেন সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন করে।

আর্জেন্টিনা

আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মাইলি এক্সে লেখেন, আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেব, কারণ আন্তর্জাতিক শান্তিতে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি তার প্রাপ্য। অন্য কোনও নেতা এমন অর্জন করলে অনেক আগেই এই পুরস্কার পেতেন।

মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এক বিবৃতিতে বলেন, মাসের পর মাস চলা ধ্বংস ও দুর্ভোগের পর এই অগ্রগতি এক ঝলক আশার আলো জ্বেলেছে।

তিনি সব পক্ষকে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্থায়ী শান্তির পথে এগোতে আহ্বান জানান।

জাপান

জাপানের প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র ইয়োশিমাসা হায়াশি বলেন, চুক্তির প্রথম ধাপে পৌঁছানো একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য এবং দুই রাষ্ট্র সমাধানের পথে বাস্তব পদক্ষেপ।

তিনি যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, মিসর ও তুরস্কের ‘অবিরাম প্রচেষ্টার’ প্রশংসা করেন এবং সব পক্ষকে আন্তরিকভাবে চুক্তি বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।

হায়াশি আরও বলেন, জাপান গাজায় মানবিক সহায়তা ও পুনর্গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।

ইতালি

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জি মেলোনি বলেন, “গাজায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপ বাস্তবায়নের এই চুক্তি সত্যিই অসাধারণ খবর।

তিনি সব পক্ষকে তাদের প্রতিশ্রুত পদক্ষেপগুলো মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ইতালি মধ্যস্থতাকারীদের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে এবং গাজার স্থিতিশীলতা ও পুনর্গঠনে অবদান রাখতে প্রস্তুত।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন

ইইউ পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কায়া ক্যালাস একে ‘উল্লেখযোগ্য কূটনৈতিক অগ্রগতি’ আখ্যা দিয়ে বলেন, এই চুক্তি বিধ্বংসী যুদ্ধের ইতি টানার বাস্তব সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

তিনি বলেন, ইইউ চুক্তির বাস্তবায়নে সহায়তা করতে প্রস্তুত।

জাতিসংঘ

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দিমুক্তি চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, সব পক্ষের উচিত চুক্তির শর্ত সম্পূর্ণভাবে মেনে চলা।

সব বন্দিকে মর্যাদার সঙ্গে মুক্তি দিতে হবে এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে হবে।

গুতেরেস আরও বলেন, জাতিসংঘ এই চুক্তির বাস্তবায়নে সহায়তা করবে এবং দুই রাষ্ট্র সমাধানের দিকে ‘বিশ্বাসযোগ্য রাজনৈতিক পন্থা’ গড়ে তুলতে কাজ করবে।

তথ্যসূত্র: টিআরটি ওয়ার্ল্ড

সম্পাদকীয় :

Editor and Publisher : Muhammad Nurul Islam


Head Office  :  53 Rue Letort  75018 Paris  State : Île-de-France

Dhaka office/   :   House No-421(1st Floor), Road No- 30, New DOHS, Mohakhali, Dhaka

Email  : editor.eurobarta@gmail.com, Mobile : +33753471445


অফিস :