হেলিকপ্টার থেকে গুলির নির্দেশ দেন হাসিনা সেটা প্রমাণিত - চিফ প্রসিকিউটর

আপলোড সময় : ১৫-১০-২০২৫ , আপডেট সময় : ১৫-১০-২০২৫ ১১:২১:১৪ অপরাহ্ন
হেলিকপ্টার থেকে গুলির নির্দেশ দেন হাসিনা, তা প্রমাণিত বলেছেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। জুলাই-অগাস্টের আন্দোলন চলাকালে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর তথ্য বিস্তারিতভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তুলে ধরেছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা তিন ব্যক্তির সঙ্গে কথপোকথনে নিশ্চিত করেছেন যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তিনি প্রাণঘাতী অস্ত্র (ল্যাথাল উইপন) ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি (শেখ হাসিনা) ড্রোন ব্যবহারে অবস্থান শনাক্ত করে হেলিকপ্টার থেকে গুলিতে হত্যারও নির্দেশ দিয়েছেন। হাসানুল হক ইনুকে তিনি নিশ্চিত করেছেন যে নারায়ণগঞ্জে হেলিকপ্টার থেকে ছত্রীসেনা নামানো হবে এবং উপর থেকে ‘বম্বিং’ করা হবে, ‘প্যারাট্রুপার’ নামানো হবে। বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ চতুর্থ দিনের যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন তিনি। পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে এদিন দুটির যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবারও প্রসিকিউশন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচার শেখ হাসিনা, সাবেক স্বররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন চিফ প্রসিকিউটর।

এর আগে মঙ্গলবার হাসিনার সঙ্গে হাসানুল হক ইনু, শেখ ফজলে নূর তাপস ও এস এম মাকসুদ কামালের কথপোকথনের অডিও আদালতে শোনানো হয়। তাজুল বলেন, এ সমস্ত কথপোকথনের মধ্য দিয়ে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার অর্থাৎ দেশব্যাপী ‘ওয়াইডস্প্রেড’ এবং ‘সিস্টেমেটিক’ যে হামলার কথা আমরা বলছি, সেটি সংঘটনের জন্য তার (শেখ হাসিনা) সরাসরি নির্দেশ প্রমাণিত হয়েছে। শেখ হাসিনার সঙ্গে কথোপকথনের যে অডিও ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়েছে, সেখানে তার কণ্ঠ সঠিক, নাকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে করা হয়েছে সে বিষয়ে প্রসিকিউশনের তরফে বক্তব্য রাখার কথা বলেছেন চিফ প্রসিকিউটর। তিনি বলেন, পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছি, বাংলাদেশের সিআইডি-তারা ফরেনসিক পরীক্ষা করে বলেছে এই কণ্ঠস্বর শেখ হাসিনার; এবং তার সাথে যাদের কথা হয়েছে শেখ ফজলে নূর তাপসের কণ্ঠস্বর তারা নিশ্চিত করেছেন। হাসানুল হক ইনুর কণ্ঠস্বর তারা নিশ্চিত করেছেন। মাকসুদ কামালে কণ্ঠ তারা নিশ্চিত করেছেন। এই কথোপথন যে এআই দিয়ে করা হয়নি, সেটি তারা ‘নিশ্চিত’ করেছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বাইরের দুইটি প্রতিষ্ঠান বিবিসি এবং আল-জাজিরা। বিবিসি তাদের একটা আলাদা প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে এই কণ্ঠস্বর এআই দিয়ে করা হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। তারা নিশ্চিত করেছে এটা শেখ হাসিনার কণ্ঠ, এআই দিয়ে করা নয়। হত্যার নির্দেশনার ব্যাপারে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, নির্দেশটা যে সত্যিকার অর্থে শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন পুলিশ বাহিনীর তদনীন্তন প্রধান সরাসরি আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন যে প্রাণঘাতি অস্ত্র ব্যবহার করা, হেলিকপ্টার ব্যবহার করার নির্দেশনা তিনি পেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছিলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে টেলিফোন করে জানান প্রধানমন্ত্রী তাকে এ নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি তখন এ নির্দেশটি তার অধস্তন কর্মকর্তাদের জানান। অধস্তন কর্মকর্তারা অর্থাৎ ডিএমপির তদানীন্তন কমিশনার হাবিব, প্রলয় জোয়ার্দার-তারা কমান্ড সেক্টরের মাধ্যমে, ওয়্যারলেস মেসেজের মাধ্যমে বিভিন্ন কমান্ড পোস্ট, বিভিন্ন জায়গায় যে সমস্ত বাহিনীকে নিয়োগ করা হয়েছে, তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। ফলশ্রুতিতে দেশব্যাপী মারণাস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের যে প্রমাণ এই কমান্ড বা এই হুকুমের পরিপ্রেক্ষিতে, সেগুলোর বিস্তারিত প্রমাণ আমাদের ‘লাইভ উইটনেস’ যারা রয়েছেন তাদের প্রমাণ আমরা দেখিয়েছি।


‘ডকুমেন্টারি এভিডেন্স’ আমরা দেখিয়েছি। পত্রপত্রিকার রিপোর্ট দেখিয়েছি, ভিডিও ফুটেজ-কীভাবে প্রাণঘাতি ব্যবহার করা হয়েছে, কীভাবে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিস্তারিত প্রমাণ এতটাই অকাট্যভাবে তুলে ধরা হয়েছে এ আদালত শুধু নয়, তারা এ প্রমাণ দিয়ে আন্তর্জাতিক কোনো আদালত হোক, বিশ্বের যে-কোনো দেশে, যে-কোনো আদালতে তোলা হোক অকাট্যভাবে এ আসামিদের অপরাধ প্রমাণিত হবে। এই নির্দেশ সুনির্দিষ্টভাবে উপর থেকে ক্রমান্বয়ে নিচে এসেছে এবং তা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটাও প্রমাণিত হয়ে যে এ অপরাধগুলো ছিল ‘ওয়াইডস্প্রেড’ এবং ‘সিস্টেমেটিক’। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, দেশীয় আইন অনুযায়ী একটা অপরাধকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হওয়ার জন্য ওয়াইস্প্রেড এবং সিস্টেমেটিক হওয়ার যে শর্ত, সে শর্ত পরিপূরণ সম্পূর্ণভাবে এ মামলায় প্রমাণিত হয়েছে। হেলিকপ্টার থেকে গুলি বিষয়ে তিনি বলেন, হেলিকপ্টার থেকে যে গুলি করা হয়েছে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোর কাছ থেকে ‘ডিটেইলড ফ্লাইটের চার্টার’ আমরা সংগ্রহ করেছি।


সে ফ্লাইটগুলোতে কতক্ষণ ফ্লাইটের ডিউরেশন ছিল সেগুলো আমরা দেখিয়েছি, সে ফ্লাইটগুলো অপারেট করেছেন কোন কোন পাইলট তাদের নাম ও ফোন নাম্বার আমরা দেখিয়েছি। ওইখানে পাইলট ছাড়া আর কোন কোন সৈনিক বা অফিসার যাত্রী ছিলেন তা আমরা দেখিয়েছি। এছাড়া সেখানে কী কী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, তোলা হয়েছে তার তালিকা, কত রাউন্ড গুলি করা হয়েছে তার তালিকা দিয়েছেন বলে তাজুল তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সেখানে এসএমজি, লাইট মেশিনগান, শটগান, রাইফেল, সাউন্ড গ্রেনেড, স্টান গ্রেনেড সবকিছুর হিসাব আছে। ভিডিও ফুটেজ, আহতদের গুলিবিদ্ধ হওয়া, শহীদ এবং আহতদের শরীর থেকে যে বুলেটগুলো বের করা হয়েছে তাও আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। 'এই যে চেইন, হুকুম দেওয়া থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত কার্যকর হওয়া এবং সেটার পরিণামে কীভাবে মানুষগুলো মারা গেল তাদের দেহ থেকে কীভাবে বুলেট উদ্ধার হলো, এ বুলেটগুলো কোন গ্রেডের, কোন রাইফেল থেকে এসেছে, কাদের কাছ থেকে এসেছে - এসব কিছুর অকাট্য প্রমাণ ট্রাইব্যুনালে আমরা তুলে ধরেছি। '


সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচার শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে এ মামলায় পাঁচটি অভিযোগ রয়েছে। গত ১০ জুলাই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলার ৫৪তম ও শেষ সাক্ষী ছিলেন তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীর। গত ৬ অক্টোবর আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন তার জেরা শেষ করেন।

সম্পাদকীয় :

Editor and Publisher : Muhammad Nurul Islam


Head Office  :  53 Rue Letort  75018 Paris  State : Île-de-France

Dhaka office/   :   House No-421(1st Floor), Road No- 30, New DOHS, Mohakhali, Dhaka

Email  : editor.eurobarta@gmail.com, Mobile : +33753471445


অফিস :